AOL Desk: আর মাস দুয়েকের অপেক্ষা । তারপরেই শুরু হবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021) । আকাশে-বাতালে পুজোর গন্ধ যেন ম ম করছে । নদীর ধারে কাশ ফুলে হালকা হালকা রেশ দেখা যাচ্ছে । মায়ের আগমণের প্রাককালে নিজেকে সাজিয়ে তুলছে ধরিত্রী । আমরাও প্রস্তুত হচ্ছি মনে মনে । তবে সকলের আরাধ্যা দেবী দুর্গা সম্বন্ধে আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানি না । যেমন অনেকেই জানেন না, দেবীর দশ হাতের অস্ত্রের সম্বন্ধে । দেবীকে কোন কোন দেবতা সেই অস্ত্র, কী কাজে প্রদান করেছিলেন, কোন অস্ত্রের কী-ই বা অর্থ, তাও জানা নেই অনেকের । আসুন আজ এ সম্বন্ধে কিছু জেনে নেওয়া যাক । প্রকৃত অর্থে মহামায়া’কে সর্বক্ষেত্রে পারদর্শী করে গড়েছিলেন দেবতাগণ । সমস্ত যুদ্ধে, লড়াইয়ে, সঙ্কটে তাঁকে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছিলেন । তাই তো তাঁর ১০ হাতে তুলে দিয়েছিলেন ১০ অস্ত্র । জেনে নিন সেই অস্ত্রের মাহাত্ম্য ।
ত্রিশূল: মহামায়ার হাতে ত্রিশূল তুলে দিয়েছিলেন মহাদেব৷ শোনা যায়, ত্রিশূলের তিনটি ফলার আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। মানুষ তিনটি গুণ, তমঃ, রজঃ ও সত্যকে ব্যাখ্যা করে এই তিন ফলা৷
শঙ্খ- বরুণ দিয়েছিলেন শঙ্খ৷ শঙ্খ হল সৃষ্টির প্রতীক। পুরাণ মতে শঙ্খ থেকে উৎপন্ন শব্দেই প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই জীব জগতে। আর দেবী তো মা। তাই তিনিই সমস্ত পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। সে জন্যই মা দুর্গার হাতে শঙ্খ থাকে।
চক্র- মায়ের হাতে চক্র তুলে দিয়েছিলেন বিষ্ণু৷ চক্র অর্থাৎ আবর্তন। দেবী দুর্গার হাতে চক্র থাকার অর্থ হল সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে রয়েছেন মা। তাই তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়ে চলেছে সমস্ত বিশ্ব।
গদা: যমরাজ দিয়েছিলেন দিলেন কালদণ্ড বা গদা৷ যা আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।
পদ্ম: দেবীর হাতে ব্রহ্মা তুলে দেন পদ্ম৷ পাঁকে জন্মায় পদ্ম। কিন্তু তবু সে কত সুন্দর। তেমনই মায়ের আশীর্বাদে যেন অন্ধকারের মধ্যেও আলোর আবির্ভাব হয় সেই বার্তাই দেয় পদ্ম ফুল।
বজ্র বা অশনি- দেবরাজ ইন্দ্র দিয়েছিলেন বজ্রাস্ত্র। মা দুর্গার হাতের অশনি দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। এই দুই গুণের মাধ্যমেই জীবনে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হন মানুষ।
সাপ: শেষ নাগ দিয়েছিলেন নাগহার৷ বিশুদ্ধ চেতনার প্রতীক হল এই সাপ। চেতনার নিম্ন স্তর থেকে উচ্চ স্তরে প্রবেশ এবং বিশুদ্ধ চেতনার চিহ্ন এই সাপ।
তলোয়ার বা খড়্গ – তলোয়ার হল মানুষের বুদ্ধির প্রতীক৷ যার জোরে সমস্ত বৈষম্য এবং অন্ধকারকে ভেদ করতে পারে মানুষ৷
মানুষের মগজাস্ত্র বা বুদ্ধির ধারের প্রতীক এই তলোয়ার। আর এই ধার দিয়েই যাতে সমাজের সমস্ত বৈষম্য ও অশুভকে মানুষ জয় করতে পারে। সেই বার্তাই বহন করেন মা দুর্গার হাতের খড়্গ বা তলোয়ার।
তির-ধনুক- বায়ু দিয়েছিলেন ধনুক ও তির৷ উভয়ই ইতিবাচক শক্তির প্রতিক৷ মনুষ্য শরীরের ভিতরে যে অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে তারই প্রকাশ ঘটে ধনুর টঙ্কারে। আর এই ধনু টঙ্কারের সঙ্গে জুড়ে থাকে তীর যা এই ধনুর টঙ্কারে প্রকাশিত শক্তির ভারকে বহন করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানে। মানব দেহে সেই শক্তির সঞ্চার করতেই মা দুর্গা নিজের হাতে তীর-ধনুক বহন করেন।
অগ্নি- অগ্নিদেব দিয়েছিলেন এই অস্ত্র ৷ দেবীর এক হাতে থাকে অগ্নি। এই অগ্নি জ্ঞান এবং বিদ্যার প্রতীক।