গলায় অবস্থিত প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থটি থাইরয়েড গ্রন্থি নামে পরিচিত। এটি শরীরের বেশিরভাগ বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি, থার্মোরেগুলেশন হরমোন ফাংশন এবং ওজন পরিচালনা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, থাইরয়েড গ্রন্থি যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার ফলে এই হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দিতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোন কোন খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেবেন –
১) গ্লুটেন
গ্লুটেন হল এক ধরনের প্রোটিন, যা গম, বার্লি কিংবা বাজারের প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই গ্লুটেন পাচনতন্ত্রের ক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। যার ফলে থাইরয়েড হরমোনের শোষণ বাধা প্রাপ্ত হয় এবং এটি হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যাকেও বৃদ্ধি করতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্লুটেন মুক্ত খাবারের সেবন, থাইরয়েড চিকিৎসার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কিছু গ্লুটেন-মুক্ত শস্য হল ভুট্টা, ওটস, ব্যাকহুইট, চাল, কুইনো, রাগি প্রভৃতি। তবে, আপনি যদি গ্লুটেন যুক্ত শস্য নিজের খাদ্য তালিকায় রাখতে চান তাহলে, প্রক্রিয়াজাত শস্যের বদলে গোটা শস্য ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
২) বাঁধাকপি জাতীয় সবজি
ব্রকোলি এবং বাঁধাকপির মতো, ক্রুসিফেরাস এবং ফাইবার সমৃদ্ধ সবজিগুলি এমনিতেই স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উপকারী। তবে, থাইরয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, এই পুষ্টিকর সবজি গুলোই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে। এই সকল পুষ্টিকর সবজিগুলিতে, গয়ট্রোজেন নামক যৌগ বর্তমান। যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকলাপ এবং আয়োডিনের শোষণ, ব্যাহত করতে পারে। তাই, এই সকল সবজিগুলি খাদ্যতালিকায় রাখতে চাইলে, অবশ্যই রান্না করে যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৩) সয়াবিন
সয়াবিন, টোফু এবং সয়া দুধের মধ্যে, প্রচুর পরিমাণে আইসোফ্লাভোন বর্তমান, যা থাইরয়েড হরমোনের শোষণ ব্যাহত করার পাশাপাশি, হাইপোথাইরয়েডিজমের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতেও সহায়ক। তাই বিশেষজ্ঞরা, সয়াবিন এবং সয়াবিনজাত খাদ্যদ্রব্যের সেবন, যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৪) চর্বিযুক্ত মাংস
চর্বিযুক্ত মাংস এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের সেবন, যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। হাইপোথাইরয়েডিজম এবং নিম্ন-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিনের সেবন, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। যা মূলত, হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই শুয়োর, খাসি কিংবা গরুর মাংসের পরিবর্তে, মুরগি কিংবা মাছের সেবন বেছে নিন।
৫) ক্যাফেইন
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন পরিপাকতন্ত্রের কার্যকলাপ এবং থাইরয়েড হরমোনের শোষণ ব্যহত করতে সক্ষম। এছাড়া, বিশেষজ্ঞরা হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের, সকাল বেলা প্রথমেই থাইরয়েড সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসকচিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের অন্ততপক্ষে ৩০-৪০ মিনিট পর, এক কাপ কফি কিংবা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়র সেবন করা যেতে পারে।
৬) জাঙ্ক ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার
হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের, জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ধরনের খাবারগুলি থাইরয়েডের সমস্যা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের খাবারগুলি সাধারণত অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত হয়, যা হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, অত্যন্ত ক্ষতিকর।