দেবী দুর্গা বলতেই চোখে ভেসে ওঠে পীতবর্ণ কিংবা হরিদ্রাবর্ণ অথবা অতসী। রঙ নিয়ে রহস্য লুকিয়ে আছে সনাতন বিধানে। সেখানে বলা হয়েছে, দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো। এবার মজার ব্যাপার হল, অতসী ফুল বঙ্গদেশের একেক জায়গায় একেক রঙের ফোটে। বেশির ভাগ জায়গাতেই তার রঙ হয় সোনালি, তাই বঙ্গদেশের দুর্গার মূর্তির গায়ের রং হয় সোনার মতো।আবার কিছু কিছু জায়গায় অতসী ফুল ফোটে নীল রঙের, সেইসব জায়গায় দুর্গামূর্তি হত নীল রঙের।
এই রং নিয়ে নানা রকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে। দেবীর বর্ণনায় ‘তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভ্যাম্’ কথাটা পাওয়াই যায়। ঋগ্বেদ অনুযায়ী আদিবর্ণ, ‘লোহিতকৃষ্ণশুক্লাম্’। ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হচ্ছে, তিনটি বর্ণই আদি, ‘ত্রীণি রূপাণীত্যেব সত্যম্’। অগ্নি বা সূর্য হল লোহিত। জল বা বরুণ হল শ্বেত। পৃথ্বী বা পৃথিবী হল কৃষ্ণ।
রুপোর গয়না, দামি জুয়েলারির নেকলেশ, সোনার শাড়ি মা দুর্গাকে সাজাতে আজকাল পুজো উদ্যোক্তারা নানারকম কারুকাজ করছেন। তা তো আসলে থিম আর মণ্ডপ সাজানোর জন্য। পুরাণ মতে মা দুর্গার পরনের শাড়ি লালচে অগ্নি বর্ণের। রাগ, শক্তি আর জয়ের প্রতীক এই শাড়ি। সমাজের সমস্ত পাপ খণ্ডন করে শুভ শক্তির জয়জয়কার ঘোষণা করে শাড়ির এই রং।
জলপাইগুড়ি বৈকণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গা রক্তবর্ণা। হাতে থাকে শূল বা বল্লম জাতীয় অস্ত্র, সেটা দিয়েই দেবী অসুরের বক্ষদেশে আঘাত করেছেন। আগে কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী কেউ থাকত না। কয়েক বছর ধরে তাদের লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আগের মতো জয়া, বিজয়া, মহাদেব, ব্রহ্মা, মেছেনিও আছেন।
রায়কত পরিবারের লাল দুর্গা বাঘের ওপরই অধিষ্ঠান করেন। ওপার বাংলাতেও লাল দুর্গা পুজোর ঐতিহ্য রয়েছে। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে লাল দুর্গা পুজো হয়ে আসছে প্রায় তিনশো বছর ধরে। মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে এই পুজো।